শুক্রবার, ২৩ মার্চ, ২০১৮

হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশতী রঃ এর সঃক্ষিপ্ত জীবনী

 খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতি আজমেরি সানজিরী গরীবে নেওয়াজ, রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক।

সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতি আজমেরি সানজিরী আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশুদ্ধ মতে- ৫৩৬ হিজরী সনের ১৪ই রজব ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার শরীফ)-এ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার পিতা ছিলেন হযরত সাইয়্যিদ গিয়াস উদ্দিন হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আম্মাজান ছিলেন হযরত উম্মুল ওয়ারা রহমতুল্লাহি আলাইহা। বুযুর্গ পিতা-মাতা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের উভয়ের দিক হতে তিনি ছিলেন আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাইশী অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ আওলাদ আহলে বাইত শরীফ আলাইহিস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত সুবহানাল্লাহ!!!

উনার বয়স মুবারক যখন ১৫ বৎসর, তখনই উনার বুযুর্গ পিতা-মাতা উনারা উভয়ে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। বুযুর্গ পিতা-মাতা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনারা উভয়ে যমীন থেকে বিদায় নেয়ার পর তিনি ওয়ারিশ সূত্রে একটি যাঁতি ও একটি আঙ্গুর ফলের বাগান লাভ করেন।

কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একদিন ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত উক্ত বাগানে কাজ করছিলেন; এমন সময় উক্ত বাগানে তাশরীফ আনলেন মজ্জুব ওলী হযরত ইবরাহীম কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি। গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেহেতু মাদারযাদ ওলী ছিলেন, তাই উনার অন্তরে ওলীআল্লাহ উনাদের প্রতি ছিল অফুরন্ত সম্মান ও মুহব্বত। তিনি হযরত ইবরাহীম কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে কিছু আঙ্গুর ফল পেশ করলেন।

পক্ষান্তরে হযরত ইবরাহীম কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার থলি থেকে কিছু খাদ্য বের করে চিবিয়ে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খেতে দিলেন। গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত খাদ্য মুবারক খাওয়ার পর উনার মধ্যে ভাবান্তর (হাল) সৃষ্টি হয়ে যায়। যার ফলে তিনি উনার সম্পদ যাঁতি ও বাগান বিক্রি করে দিয়ে পবিত্র ইলমে দ্বীন অর্জন করার জন্য সফরে বের হয়ে যান। প্রথমে সমরখন্দ ও বুখারা গিয়ে সাড়ে সাত বৎসরে ইলমে ফিক্বাহতে পূর্ণ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। অতঃপর ইলমে তাছাউফ অর্জন করার লক্ষ্যে শায়েখ তথা পীর ছাহেব তথা মুর্শিদ ক্বিবলা তালাশ করতে লাগলেন এবং তৎকালীন যামানার শ্রেষ্ঠ ও বিশিষ্ট বুযুর্গ ও ওলীআল্লাহ হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হয়ে প্রায় সাড়ে বিশ বৎসর কঠোর রিয়াযত-মাশাক্কাত ও মুরাক্বাবা-মুশাহাদার মাধ্যমে ইলমে তাছাউফে পূর্ণতা হাছিল করেন। এর পূর্বে উনার শায়েখ হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! চলুন, আপনাকে মহান আল্লাহ পাক ও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নিকট সোপর্দ করে দিবো।” সুবহানাল্লাহ!!!

শায়েখুন নাস, শায়েখুশ শুয়ুখ হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাকে নিয়ে পবিত্র হজ্জে রওয়ানা হয়ে গেলেন। পবিত্র হজ্জ সমাপন করে অর্থাৎ পবিত্র কা’বা শরীফ যিয়ারত করার পর হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হে মহান আল্লাহ পাক! হযরত মুঈনুদ্দীন চীশতী উনাকে আপনার নিকট সোপর্দ করে দিলাম, আপনি উনাকে কবুল করুন।” গাইব থেকে নেদা হলো- “হে হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আমি মহান আল্লাহ পাক হযরত মুঈনুদ্দীন চীশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কবুল করে নিলাম।” সুবহানাল্লাহ!!!

অতঃপর পবিত্র মদীনা শরীফ গিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান্নাবীঈন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ যিয়ারত করলেন। তখন হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! আপনি সালাম পেশ করুন।” তিনি সালাম দিলেন- “আসসালামু আলাইকুম ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!” পবিত্র রওযা শরীফ হতে জাওয়াব আসলো- “ওয়া আলাইকুমুস সালাম ইয়া কুতুবাল মাশায়িখ।” অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং উনাকে লক্বব মুবারক দিলেন- “কুতুবুল মাশায়িখ” বা মাশায়িখগণ উনাদের কুতুব। সুবহানাল্লাহ!!!

সুলত্বানু হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দ্বিতীয়বার যখন হযরত গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে রওযা মুবারক যিয়ারত করলেন, তখন উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লক্বব মুবারক দিলেন, ‘কুতুবুল বাররি ওয়াল বাহরি’।

তৃতীয়বার যখন রওযা মুবারক যিয়ারতে গেলেন তখন লক্বব মুবারক দিলেন ‘কুতুবুল হিন্দ’ অর্থাৎ হিন্দুস্থানের কুতুবিয়ত উনাকে হাদিয়া করা হলো। সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশক্রমে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজ হিদায়েতের কেন্দ্রস্থল হিন্দুস্তানে চলে আসেন।

তিনি অক্লান্ত কোশেশ ও হিকমতপূর্ণ তাজদীদের মাধ্যমে হিন্দুস্তান থেকে শিরক, কুফর, বিদয়াত-বেশরা সম্পূর্ণরূপে মূলোৎপাটন করেন এবং উনার উসীলায় অসংখ্য লোক পবিত্র ঈমান লাভ করে মুসলমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। বর্ণিত রয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র অলি আল্লাহ, যাঁর উসীলায় মহান আল্লাহ পাক তিনি এক কোটিরও বেশি লোককে পবিত্র ঈমান দান করেন যার মধ্যে ২০ লক্ষ মতান্তরে ৪০ লক্ষ ব্রাহ্মণ ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!!!

গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এতো বিরাট সফলতা অর্জন করার একমাত্র কারণ হলো, তিনি আজীবন মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয় যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে রব হিসেবে মেনেছে এবং এর মধ্যে দৃঢ় রয়েছে, উনাদের উপর হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম নাযিল হবেন।” অর্থাৎ উনাদের জন্যই রয়েছে গইবী মদদ।

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা চিন্তিত হয়ো না, পেরেশান হয়ো না, তোমরাই কামিয়াবী অর্জন করবে, যদি তোমরা মু’মিন হতে পারো।”

সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেহেতু মু’মিনে কামিল ছিলেন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের উপর দৃঢ়ভাবে দায়িম-ক্বায়িম ছিলেন, তাই তিনি এতো বিরাট কামিয়াবী বা সফলতা অর্জন করেছেন। সুবহানাল্লাহ!!!

সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে কতটুকু কামিয়াবী বা সফলতা হাছিল করেছেন, নিম্নোক্ত ঘটনা থেকে তা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়।

সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ আছে, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যখন বিদায় নেয়ার সময় হলো তখন তিনি উনার প্রধান খলীফা হযরত কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে বললেন, “হে বখতিয়ার কাক্বী! আমার সময় শেষ, আমার নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার যা নিয়ামত রয়েছে, তা আমি আপনাকে দিয়ে যাচ্ছি, আপনি তার হক্ব আদায় করবেন। আর আপনি দিল্লি চলে যান, আপনার হিদায়েত বা পবিত্র দ্বীন প্রচারের স্থল হলো দিল্লি।” হযরত বখতিয়ার কাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও শুধুমাত্র মহামান্য শায়েখ উনার নির্দেশ মুবারক পালন করা ফরয তাই সেই ফরয পালনার্থে আমি দিল্লি চলে গেলাম। সেখানে গিয়ে বিশ দিন পর আমি সংবাদ পেলাম আমার মহাসম্মানিত শায়েখ গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিদায় নিয়েছেন। মহামান্য শায়েখ উনার বিদায়ের কারণে আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। আমি আছর নামায পড়ে জায়নামাযে বসা ছিলাম। এমন সময় আমার তন্দ্রা এসে যায়, আমি দেখতে পেলাম, আমি আমার মহামান্য শায়েখ উনার সম্মুখে উপস্থিত। আমি মহামান্য শায়েখ উনাকে দেখে সালাম দিলাম ও কদমবুছী করলাম। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলাম, “হে আমার সম্মানিত শায়েখ! আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক রেযামন্দির জন্য ৯৭টি বৎসর ব্যয় করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন?

জবাবে গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “হে বখতিয়ার কাক্বী! প্রথমত, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ক্ষমা করেছেন। দ্বিতীয়ত, যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সবচেয়ে মকবুল, উনারা সম্মানিত আরশ উনার অধিবাসী হবেন। অর্থাৎ উনারা সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক দীদারে মশগুল থাকবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি দয়া করে আমাকে সেই সম্মানিত আরশ উনার অধিবাসী উনাদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অর্থাৎ আমি সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার দীদারে মশগুল আছি।” সুবহানাল্লাহ!!!

গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক মতে মত ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক পথে পথ হওয়ার কারণেই অর্থাৎ পবিত্র সুন্নত উনার পূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই এত বিরাট সফলতা অর্জন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে হাবীব! আপনি (উম্মাহকে) বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত পেতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ করো। যদি তোমরা আমাকে অনুসরণ করো, তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুনাহখাতা ক্ষমা করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ইতায়াত বা অনুসরণ করবে, সে বিরাট সফলতা লাভ করবে।”

কাজেই কামিয়াবী তথা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন করতে হলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম, পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে। যেমনটি করেছিলেন সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি।

গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে কতটুকু পবিত্র সুন্নত উনার অনুসরণ করতেন সে প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়- উনার বয়স মুবারক যখন নব্বই (৯০) বছর তখন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করলেন। যদিও ওলীআল্লাহ উনারা সর্বদাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করে থাকেন। যখন বিশেষ সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করলেন তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, “হে মুঈনুদ্দীন! (মুঈনুদ্দীন অর্থ- দ্বীনের সাহায্যকারী)! আপনি সত্যিই আমার দ্বীনের সাহায্যকারী, আপনি আমার সব পবিত্র সুন্নতই পালন করেছেন, তবে একটি পবিত্র সুন্নত এখনো বাকি রয়ে গেলো কেন?”

গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চিন্তা করে দেখলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র দ্বীন উনার খিদমতে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি তখনো বিবাহ করেননি। তাই তিনি নব্বই (৯০) বৎসর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশে পরপর দুটি বিবাহ করে এ পবিত্র সুন্নতও আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ!!!

মূলত, পবিত্র সুন্নত উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কুদরতীভাবে ‘হাবীবুল্লাহ’ লক্বব মুবারক হাদিয়া করেন।

হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে ‘হাবীবুল্লাহ’ হলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি আমার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খলীল ও হাবীব হিসেবে গ্রহণ করেছি।” সুবহানাল্লাহ!!!

আর ওলীআল্লাহ উনাদের মধ্যে যদিও অনেকেই ‘হাবীবুল্লাহ’। কিন্তু দু’জন ব্যক্তি পৃথিবীতে ‘হাবীবুল্লাহ’ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। একজন হলেন হযরত যুননূন মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। আর দ্বিতীয়জন হলেন সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। উনারা পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের উনাদের কপাল মুবারক-এ কুদরতীভাবে সোনালি অক্ষর মুবারক-এ লিখিত হয়েছিলো- ‘হা-যা হাবীবুল্লাহ মা-তা ফী হুব্বিল্লাহ’ অর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!!!

স্মরণযোগ্য যে, এই মহান ওলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত তরীক্বা উনার নাম হলো- “চীশতিয়া তরীক্বা” অর্থাৎ তিনিই এ সম্মানিত তরীক্বা উনার ইমাম। এ সম্মানিত তরীক্বা সম্পর্কেও রয়েছে বিশেষ সুসংবাদ। তিনি হিজরী সপ্তম শতকের মুজাদ্দিদ।

এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে গাউছুল আ’যম, বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আফদ্বালুল আউলিয়া, মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ন্যায় গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতিও শত-সহস্রবার ইলহাম করা হয়েছে এই বলে যে, “হে হযরত মুঈনুদ্দীন চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনাকে ক্ষমা করা হলো এবং আপনাকে যারা মধ্যস্থতায় ও বিনা মধ্যস্থতায় উসীলা বানাবে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকেও ক্ষমা করা হলো।” সুবহানাল্লাহ!

এ মহান মুজাদ্দিদ তিনি ৬৩৩ হিজরী ৬ই পবিত্র রজবুল হারাম শরিফের মুবারক দিনে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)।

আফসোস লাগে তাদের জন্য যারা নিজেদের গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাজা ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুসারী আর আশেক বলে দাবি করে অথচ উনার পবিত্র মাজার শরীফ সহ নিজেদের জীবন কে করে রেখেছে হারামের আড্ডাখানা বানিয়ে। মহান আল্লাহ পাক সবাইকে হক্ব বোঝার তৌফিক দান করুন আমিন।

হযরত খাজা মইনুদ্দীন চিশতী রঃ এর সঃক্ষিপ্ত জীবনী

 খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতি আজমেরি সানজিরী গরীবে নেওয়াজ, রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক। সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ,...